গত ১৬ জুলাই চট্টগ্রামের মুরাদপুর-শুলকবহর মাদ্রাসা সড়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অন্যদের সঙ্গে আহত হন কক্সবাজারের মহেশখালীর কালারমার ছড়া এলাকার নির্মাণশ্রমিক সাইফুল ইসলাম (২১)। ঘটনার দেড় মাস পর গত ৩১ আগস্ট পাঁচলাইশ থানায় ৪৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতপরিচয় ৫০-৬০ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা নথিভুক্ত হয়। এ মামলায় বাদী হিসেবে দেখা যায় আহত সাইফুলের মা ফাতেমা বেগমের (৪৯) নাম। ফাতেমা বেগমের বাড়ি কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের আঁধারঘোনা গ্রামে। কিন্তু ফাতেমা বেগম এবং তার আহত ছেলে সাইফুল ইসলাম মামলা সম্পর্কে কিছুই জানেন না।ফাতেমা বেগম বলেন, গত ২০ বছরে তিনি একবারও চট্টগ্রাম শহরে যাননি। মামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে প্রথম শুনেছেন। এ পর্যন্ত পুলিশের কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগও করেনি।মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৬ জুলাই ফাতেমা বেগমের ছেলে সাইফুল তার বন্ধুদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন। কালা মিয়া বাজার থেকে মুরাদপুর মোড়ে এলে আসামিরা দলবদ্ধ হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। আসামিদের হাতে বাঁশ, কাঠের লাঠি, ইট-পাথর, লোহার রড ও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। হত্যার উদ্দেশ্যে লাঠি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারধর, গুলিবর্ষণের ঘটনায় সাইফুলসহ অনেকেই গুরুতর আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকেন। লোহার রড ও হাতুড়ির আঘাতে সাইফুলের মাথা ফেটে যায়। বাম পা ও হাতে প্রচণ্ড জখম হয়। একজন রিকশাচালক সাইফুলকে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান, সেখানে সাইফুলের মাথায় সেলাই দেওয়া হয়। চমেক হাসপাতালে রোগীর অতিরিক্ত চাপের কারণে পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাইফুলকে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর তাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান মা ফাতেমা বেগম। মামলায় উল্লেখ করা হয় সাইফুল দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। মামলার প্রধান আসামি চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম আর আজিম (৪৫) ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি (৩৭)। ঘটনা চট্টগ্রাম শহরে হলেও আসামি করা হয় কক্সবাজারের পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা, রাউজান, চান্দনাইশসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষজনকে। এর মধ্যে প্রবীণ শিক্ষক, লবণচাষি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীও রয়েছেন। ফাতেমা বেগম বলেন, গত ১০ জুলাই সাইফুল রাজমিস্ত্রির কাজ করতে চট্টগ্রাম শহরে যায়। ১৬ জুলাই বিকেলে কাজ শেষ করে ভাড়া বাসায় ফেরার পথে মুরাদপুর এলাকায় ছাত্রলীগ-পুলিশ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ত্রিমুখী সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে সাইফুল। এতে সে গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। তিন দিন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর পর বাবা ও বড় বোন হাসপাতালে গিয়ে সাইফুলকে মহেশখালীতে নিয়ে আসে। পরে সাইফুল আর চট্টগ্রামে যাননি। ফাতেমা নিজেও গত ২০ বছর চট্টগ্রামে যাননি বলে দাবি করেন।আহত সাইফুল বলেন, পাঁচলাইশ থানায় গিয়ে তার মা মামলা করবেন দূরের কথা, মহেশখালী থানায় যাতায়াতের সামর্থ্য তাদের নেই। কে বা কারা তার মায়ের নাম ব্যবহার করে মামলা করেছেন—তার তদন্ত হওয়া দরকার।এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাজ্জাদ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় এবং পরবর্তী অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে থানায় এসে অনেকে মামলা করেছেন। তখন তদন্ত করে মামলা রেকর্ড করার সুযোগ ছিল না। এখন সেসব মামলার তদন্ত চলছে। এজাহারে নিরপরাধ কাউকে যদি আসামি করা হয়, সে ক্ষেত্রে পরে বাদ দেওয়ার সুযোগ আছে।
ReplyForwardAdd reaction |