পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়….

*স্কুল জীবনের স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল

‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়/ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়। আয় আর একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়। মোরা সুখের দুঃখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়’।

মাইকে কবি গুরুর এ গানটি বাঁজার সাথে সাথে পুনর্মিলনী মিলন মেলায় উপস্থিত প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা সবাই হারিয়ে গিয়েছিলেন স্কুল জীবনের সেই পুরনো দিনের স্মৃতিতে।

খুঁজে ফিরেছেন শিক্ষাজীবনের দিনগুলোর স্মৃতিকথা। এসময় পুরো স্কুল মাঠজুড়ে এক ভিন্নরকম আবহের সৃষ্টি হয়েছিলো।

আজ শনিবার সকাল দশটায় বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পিঙ্গলাকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গর্বময় পথচলায় ৪৮ বছরে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় দিনব্যাপী পুনর্মিলনী উৎসব।

এই উৎসবকে ঘিরে বিদ্যালয়ে বসেছিল নবীন ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা। উৎসবে শামিল হওয়া প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অনেকেই এখন দেশ-বিদেশে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। আর তারাই যেন ফিরে গিয়েছিলেন সেই উচ্ছল তারুণ্যভরা দিনগুলোতে।

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন আয়োজনের ফাঁকে ফাঁকে আড্ডা ও সেলফিবাজিতে মেতে উঠেছিলেন শিক্ষার্থীরা। পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিলো বিশ্বব্যাপী জননন্দিত অভিনেতা ও স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র মোশাররফ করিম।

স্কুল জীবনের সেই সহপাঠীদের সাথে দেখা হতেই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময়ে মেতে ওঠেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন বছর যারা একসাথে স্কুল জীবনে কাটিয়েছেন, তারা কর্ম কিংবা সংসার জীবনের মোহে দীর্ঘকাল দূর দূরান্তে থাকায় অনেকেরই সাথে আর দেখা হয়নি।

তাই এই সর্বপ্রথম প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুর্নমিলনীতে দীর্ঘবছর পর দেখা হয়েছে একসময়ের বহু আপনজন সেই বন্ধু কিংবা বান্ধবীদের সাথে। যেকারণে দীর্ঘদিন পর প্রিয় সহপাঠীকে কাছে পেয়ে আড্ডা আলাপচারিতার পাশাপাশি চলে পারিবারিক ও কর্মস্থলের গল্প। কেউ কেউ ফিরে যান বিদ্যালয় জীবনের মজার স্মৃতির কথায়।

সবমিলিয়ে পুর্নমিলনীকে ঘিরে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে সীমাহীন আনন্দ যেমন ছিলো, তেমনি কিছুটা বিষদের ঘটনাও ঘটেছে। এতোদিনে যেসব সহপাঠীরা দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেছেন তাদের স্মরণ করে অনেক সহপাঠীরা অনেকটা বিষন্নও হয়েছেন।

‘এসো মিলি প্রাণের স্পন্দনে’ শ্লোগানকে সামনে রেখে পিঙ্গলাকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্বরে শনিবার সকাল দশটায় জাতীয় সংগীত শেষে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে পুর্ণমিলনীর অনুষ্ঠানের উদ্বোধণ করা হয়।

এরপর প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পরিচয় ও স্মৃতিচারণা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বছরের শিক্ষার্থীরা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করার পর পরই শুরু হয় একসময়ের অতিআপনজন সহপাঠীদের সাথে মজার আড্ডা। দুপুর একটায় প্রীতিভোজের পর দুপুর আড়াইটায় শুরু হওয়া মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলে সন্ধা পর্যন্ত।

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন।

অনুষ্ঠানে প্রাক্তন ছাত্র ও পুর্নমিলনী আয়োজক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমিক পরিদর্শক অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম হেলালের মনোমুগ্ধকর সঞ্চালনায় এবং পুর্নমিলনী আয়োজক কমিটির আহবায়ক ও স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের স্বনামধন্য আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. জিয়াউল হক বাদশার সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন, বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক মো. গোলাম আজম, বিশ্বব্যাপী জননন্দিত অভিনেতা ও স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র মোশাররফ করিম,

সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি প্রাক্তন ছাত্র কেএম আনোয়ার হোসেন বাদল, অনুষ্ঠান আয়োজন কমিটির সদস্য সচিব প্রাক্তন ছাত্র রেজা হাসান রাহাত, প্রচার উপ-কমিটির আহবায়ক প্রাক্তন ছাত্র মো. মজনু খলিফাসহ অন্যান্যরা। অনুষ্ঠানে দেশের খ্যাতনামা বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও দুইবারের গৌরনদী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সাহিদা আক্তার বলেন, শেষ জীবনে এ রকম একটা আয়োজনের সাথে যুক্ত থাকতে পেরে খুব ভালো লাগছে।

আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে ২০০২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা ছাত্রী মনি আক্তার ও সেতু খানম বলেন, সত্যিকার অর্থে আজকের দিনটি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রাক্তন ছাত্র ও সহকারি শিক্ষক জিএম হানিফ এ আয়োজন ধারাবাহিকভাবে করার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ করেন।

স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান শেষে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা, জমিদাতা, অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক ও সহকারি শিক্ষকগণসহ অতিথিদের সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

দুপুরে প্রীতিভোজের পর নবীন ও প্রবীণ শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সন্তানদের জন্য খেলাধুলার আয়োজন ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়। বিকেলে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মঞ্চ মাতিয়ে রাখেন অভিনেতা মোশাররফ করিম ও তার দলের অভিনেতারা।

সবশেষে সঙ্গীত সন্ধার মাধ্যমে পুরো অনুষ্ঠানের সমাপ্তি করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *