বরিশাল বিভাগের ১৯ আসনে জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বরিশাল বিভাগে নীরবে ভোটের প্রচার-প্রচারনা চালাচ্ছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা।
ইতোমধ্যে বিভাগটির ২১টি নির্বাচনী এলাকার ১৯টিতে দলীর প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। এসব প্রার্থীর নামও ঘোষণা করা হয় দলীয় ফোরামে। সেই সাথে প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে নামার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দলের নেতাকর্মীদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের এক র্শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, তিনশ’ আসনেই প্রার্থী দেবে জামায়াতে ইসলামী। এসব আসনকে দুটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছে দলের নীতিনির্ধারক মহল।
‘এ’ ক্যাটাগরির আসনগুলোতে জয়ের জন্য লড়বেন দলের মনোনীত প্রার্থীরা। ‘বি’ ক্যাটাগরির আসনগুলো থাকবে রাজনৈতিক কৌশলগত প্রয়োজনে ব্যবহার ও সমর্থন যাচাইয়ে।
সূত্রমতে, কোনো দল বা জোটের সাথে ঐক্য হলে ‘বি’ ক্যাটাগরির আসনগুলো ছাড় দেওয়া হবে। বরিশালে ‘এ’ ক্যাটাগরির আসন হিসেবে তিনটি নির্ধারণ করেছে জামায়াত। এই তিন আসনে তাদের প্রার্থী যেমন শক্তিশালী, তেমনই জয়ের সম্ভাবনাও রয়েছে।
সূত্রে আরও জানা গেছে, বরিশালের যে তিনটি আসনে জয়ের টার্গেটে কাজ করছে জামায়াত সেগুলো হচ্ছে-পিরোজপুর-১ ও ২ এবং পটুয়াখালী-২। পিরোজপুরের দুটি আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা দেলাওয়ার হুসাইন সাঈদীর দুই ছেলের নাম।
পিরোজপুর-১ (ইন্দুরকানী-সদর-নাজিরপুর) আসনে পরপর দুইবার সংসদ সদস্য ছিলেন সাঈদী। বাবার আসনে জামায়াতের প্রার্থী হচ্ছেন সাঈদীর ছেলে ইন্দুরকানী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী।
অপর ছেলে সাঈদী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শামীম সাঈদী প্রার্থী হবেন পিরোজপুর-২ (ভান্ডারিয়া-কাউখালী-নেছারাবাদ) আসনে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে যুদ্ধাপরাধীর বিতর্কিত মামলায় আমৃত্যু কারাদন্ড পাওয়া সাঈদী রহস্যজনকভাবে কারা অভ্যন্তরে মৃত্যুবরণ করেন।
পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে প্রার্থী হিসেবে ঢাকা মহানগর জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের নাম ঘোষণা করেছেন দলের নীতিনির্ধারকরা।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শফিকুল ইসলাম মাসুদ তার নির্বাচনী এলাকায় বহু বছর ধরে নীরবে চালিয়ে আসছেন জনসমর্থন তৈরির কাজ। স্বচ্ছ ভাবমূর্তির পাশাপাশি বাউফলে রয়েছে তার শক্তিশালী নীরব ভোটব্যাংক।
এছাড়া বরিশাল-৫ (সদর) আসনের প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়ন পাওয়া সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মোয়াযযম হোসাইন হেলালের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী স্থানীয় পর্যায়ের জামায়াতের নেতাকর্মীরা।
অন্য আসনগুলোতে জামায়াতে ইসলামীর দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রাথমিকভাবে যাদের নাম চূড়ান্ত করে ঘোষণা করা হয়েছে তারা হলেন, বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে জেলা মজলিশে শূরার সদস্য মাওলানা কামরুল ইসলাম খান।
বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে জেলার নায়েবে আমির মাস্টার আব্দুল মান্নান। বরিশাল-৩ (মুলাদী-বাবুগঞ্জ) আসনে মহানগর জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর। বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনে অধ্যাপক মাওলানা আবদুল জব্বার।
বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে অধ্যাপক মাওলানা মাহমুদুন্নবী তালুকদার।
এছাড়া পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে প্রার্থী করা হয়েছে সহকারী অধ্যাপক শরীফ আব্দুল জলিলকে। ঝালকাঠি-২ (নলছিটি-ঝালকাঠি) আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য শেখ নেয়ামুল করিমকে।
পটুয়াখালী-১ (সদর-দুমকি-মীর্জাগঞ্জ) আসনে জেলা আমির অ্যাডভোকেট নাজমুল আহসান। পটুয়াখালী-৩ (গলচিপা-দশমিনা) আসনে সাবেক জেলা আমির অধ্যাপক শাহ আলম ও পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনে কলাপাড়া উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম।
বরগুনা-১ (সদর-আমতলী-তালতলী) আসনে জেলা আমির মাওলানা মহিবুল্লাহ হারুন। বরগুনা-২ (বামনা-বেতাগী-পাথরঘাটা) আসনে সাবেক মজলিশে শূরা সদস্য ডা. সুলতান আহম্মেদ।
ভোলা-১ (সদর) আসনে জেলা নায়েবে আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মো. নজরুল ইসলাম, ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান) আসনে সাবেক জেলা আমির মাওলানা ফজলুল করিম এবং ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনে সাবেক জেলা আমির মাওলানা মোস্তফা কামাল।
তবে ক্যাটাগরির বিষয়ে দ্বিমত পোষন করে দলটির এক র্শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, যেসব আসনে দলীয় প্রার্থী দেওয়া হবে শতভাগ আশা থাকবে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদক মুক্ত একটি বৈষম্যহীন উন্নত রাষ্ট্র গঠণে সাধারণ ভোটারদের মনজয় করে সেইসব আসনের প্রার্থীদের বিজয় সুনিশ্চিত করা।
নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করার ব্যাপারে বরিশাল বিভাগের দায়িত্বে থাকা দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল বলেন, চূড়ান্ত বলে কিছু নেই। নির্বাচনী তফশিল ঘোষণার পর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। তখনই কেবল বলা যাবে কারা সর্বশেষ প্রার্থী হলেন। বর্তমানে যা হচ্ছে তা একটা নিয়মিত সাংগঠনিক প্রক্রিয়া।
কোনো দল বা জোটের সাথে সমঝোতা হলে সেক্ষেত্রে করণীয় বিষয়ে তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে ২২০ আসনে আমাদের প্রার্থী ছিল। জোট হলে তখন আসন সমঝোতা হবে, জোটের পক্ষে একজন প্রার্থী থাকবে। সেটা যদি হয় তখন আবার নতুন করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, বরিশাল বিভাগের ২১ আসনের মধ্যে ১৯টিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও এখন শুধু ঝালকাঠি-১ ও ভোলা-৩ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেননি জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দরা।