রমজানকে সামনে রেখে গুড়তৈরিতে ব্যস্ত বরিশালের


আখ চাষিরা
*সম্পূর্ণ ভেজালমুক্ত তাই কদর অনেক বেশি

আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে ভেজালমুক্ত আখের গুড় তৈরিতে মহাব্যস্ত সমায় কাটাচ্ছেন বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার আখ চাষিরা।

বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের গাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা ও আখের গুড়ের কারিগর মো. রিপন জানান, বিগত দশ বছর ধরে তিনি নিজহাতে ভেজালমুক্ত আখের গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছেন।

বিশেষ করে রমজান মাসের আগে এ গুড়ের চাহিদা অন্যান্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি থাকে। তাই আসন্ন রমজান মাসকে ঘিরে তাদের এখন দম ফেলার ফুসরত নেই।

সম্পূর্ণ ভেজাল মুক্ত গুড় হওয়ায় তাদের তৈরি করা গুড়ের চাহিদা অনেক বেশি থাকে জানিয়ে রিপন আরও বলেন, গত বছর প্রায় আড়াই লাখ টাকার ভেজালমুক্ত গুড় বিক্রি করা হয়েছে।

এবারেও প্রতিকেজি ভেজালমুক্ত আখের রসের তৈরি গুড় আড়াইশ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক তাফালে আমাদের বিশেষ বালতির ১০ বালতি আখের রস গুড় বানানোর জন্য নেওয়া হয়। যেখান থেকে ৩৩ কেজির মতো বা নয় হাজার টাকার গুড় তৈরি হয়।

অপর আখচাষি সেলিম মোল্লা বলেন, লাভের চেয়ে ক্রেতাদের যে ভেজালমুক্ত আখের গুড় খাওয়াতে পারছি এটাই আমাদের বড় প্রাপ্তি।

বাবা-দাদার আমল থেকে বাবুগঞ্জে আখের রস থেকে ভেজালমুক্ত গুড় তৈরির বিষয়টি দেখে আসছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সেই হিসেবে আখের রস দিয়ে গুড় তৈরির ঐতিহ্য প্রায় শত বছরের পুরোনো।

তাদের তৈরি গুড়ে কোনো ধরনের হাইড্রোজ বা কেমিক্যাল দেওয়া হয়না।

মাটির চুলার আগুনের তাপে তৈরি গুড় খুব সুস্বাদু হয় জানিয়ে আতাহার সরদার বলেন, গুড় তৈরির পুরো কাজটি প্রাকৃতিক নিয়মে হয়। ক্ষেত থেকে আখ কেটে এনে পরিস্কারের পর সেই আখ থেকে রস বের করে বড় চুলায় তাফালে জাল দিয়ে গুড় বানানো হয়।

আবার গুড় বানাতে যে জ্বালানি ব্যবহার করা হয় তাও আখের ছাবা ও গাছের মাথার পাতা দিয়েই করা হয়।

গুড় বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে ভালো মানের গুড়ের দাম বেশি হলেও এর চাহিদা বেশি থাকে। বিশেষ করে রমজানে আখের গুড়ের চাহিদা অনেক বেশি। তাই এ সময়টাতে গুড় বিক্রির দোকানগুলোতে আখের গুড় বেশি পাওয়া যায়।

ক্রেতা মৌরিন আক্তার আশা আহম্মেদ বলেন, কোনোটি ভালো কোনোটি খারাপ গুড় সেটি যাচাইয়ের সুযোগ আমাদের থাকে না। তাই ভালোর আশায় কম দামের চেয়ে বেশি দামের গুড়েই সবার আগ্রহ থাকে। কোনো বিক্রেতা যদি ভেজাল গুড় বেশি দামে বিক্রি করেন সেটিতেও ক্রেতাদের কিছু করার থাকে না।

তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছর থেকে রমজান মাসের পূর্বে বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশার গাজীপুর গ্রামের ভেজালমুক্ত গুড় তৈরির স্থানে এসে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে গুড় ক্রয় করে নিচ্ছি।

সূত্রমতে, বরিশাল জেলায় ২০২৪-২০২৫ মৌসুমে ৩৮৩ হেক্টর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ৩৩২ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *