বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত রনি কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছেন স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকার মহাখালীতে গুলিতে নিহত জেলার বানারীপাড়া উপজেলার পূর্ব বেতাল গ্রামের আল-আমিন রনি (২৪) কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছেন। তবে মেয়ের মুখ দেখা ও বাবা ডাক শোনা হলো না তার। রনির বড়ই স্বাদ ছিল বাবা ডাক শোনার। ঘাতকের বুলেট সেই স্বপ্ন তার চিরতরে কেড়ে নিয়েছে। আর বাবার মুখ দেখাও হলো না নবজাতক কন্যার। বাবার আদর-সোহাগ ছাড়াই বেড়ে উঠবে নবজাতক কন্যা সন্তানটি। সোমবার দিবাগত রাতে শহীদ রনির স্বজনরা জানিয়েছেন, ওইদিন বানারীপাড়া উপজেলা হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশেনের মাধ্যমে ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন নিহত রনির স্ত্রী মিম আক্তার (১৯)। বানারীপাড়া উপজেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. ফকরুল ইসলাম মৃধা বলেন, প্রসূতি তার তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। মা ও মেয়ে উভয়ই সুস্থ্য আছেন। তিনি আরও বলেন, শুরু থেকে তিনিসহ হাসপাতালের চিকিৎসকরা মিমকে সার্বক্ষণিক নজরে রেখেছেন। প্রসূতিকে সুস্থ্য রাখার জন্য সবধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সূত্রমতে, উপজেলার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের পূর্ব বেতাল গ্রামের বাসিন্দা মৃত দুলাল হাওলাদের ছেলে আল-আমিন রনি (২৪) রাজধানীর মহাখালীর মাল্টিব্র্যান্ড ওয়ার্কশপে কাজ করতেন। বাবা দুলাল হাওলাদার করোনাকালে মারা গেছেন । মা মেরিনা বেগম, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মিম ও ছোট ভাই রহিমকে নিয়ে ঢাকার মহাখালী সাততলা বাউন্ডারি বস্তি এলাকার ভাড়া বাসায় থাকতেন রনি। রনি নিহত হওয়ার সময় উপজেলার চাখারে বাবার বাড়িতে ছিলেন তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী। উপজেলার চাখার সরকারি ফজলুল হক কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করা রনি বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরতে ঢাকার মহাখালীতে একটি ওয়ার্কশপে কাজ নিয়েছিলেন। বাড়তি আয়ের জন্য রাতে একটি খাদ্যপণ্য কোম্পানির ডেলিভারি বয়ের কাজ করতেন তিনি। তার মা গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন। রনির আয় দিয়ে চলতো তাদের চার সদস্যর পরিবার। ঘটনার দিন ১৯ জুলাই বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মায়ের কাছ থেকে ১০০ টাকা নিয়ে মহাখালীর বস্তি এলাকার বাসা থেকে বের হন রনি। বিকেল পাঁচটার দিকে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। ওইদিন রাত আটটার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে রনির মরদেহ শনাক্ত করেন তার মা মেরিনা বেগম। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ ২০ জুলাই বানারীপাড়ার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের পূর্ব বেতাল গ্রামে আনা হয়। ওইদিন দিবাগত রাতে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে রনিকে দাফন করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রনি রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। তিনি পরিবারের একমাত্র রোজগারের ব্যক্তি। তার আয়েই চলতো সংসার। মাস শেষে কষ্টার্জিত উপার্জনের টাকা তিনি মায়ের হাতে তুলে দিতেন। গ্রামের বাড়ি থাকা দাদীও তার ভরণ-পোষণে রনির ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। রনি নিহত হওয়ার সময় তার স্ত্রী মিম ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। আদরের নাতিকে হারিয়ে আজও কান্না থামছে না রনির দাদি শতবর্ষী মরিয়ম বেগমের। শোকে স্তব্ধ শহীদ রনির মা মেরিনা বেগম ও স্ত্রী মিম। রনির মা মেরিনা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে সাংবাদিকদের কাছে বলেন, আজ রনি বেঁচে থাকলে মেয়ের মুখ দেখে কতোইনা খুশি হতো। সন্তানের মুখ দেখা ও বাবা ডাক শোনার খুবই ইচ্ছে ছিল আমার রনির। রনির শ্বশুর ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ী মো. কামাল হোসেন মাঝি বলেন, আমার মেয়ে মিম এইচএসসি পাস করেছে। তার নবজাতক মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে হলেও মিমকে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য আমি সরকারের কাছে জোর দাবি করছি।