ববি’র ভিসির পদত্যাগের দাবিথেকে সরে দাঁড়িয়ে নতুনকর্মসূচি

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুচিতা শরমিনের পদত্যাগের এক দফা দাবি থেকে সরে এসেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এবার তারা নতুন নিয়োগ দেওয়া কোষাধ্যক্ষের অপসারণসহ বেশ কিছু দাবি বাস্তবায়নের জন্য এক মাসের সময় বেঁধে দিয়েছেন।

উপাচার্যের সাথে বৈঠকের পর মঙ্গলবার দিবাগত রাত নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্যা জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে জানতে আজ বুধবার সকালে উপাচার্য শুচিতা শরমিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিফ না করায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর এটিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা বৈঠকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী কয়েক দফা দাবী লিখিতভাবে আমাদের দিয়েছে।

তারা বলেছে, উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবির ব্যাপারে তারা অনড় আছেন। তবে স্বল্প মেয়াদী দাবিগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতির বিষয়টি তারা এক মাস পর্যবেক্ষণ করবে।

আর দীর্ঘমেয়াদী দাবিগুলো বাস্তবায়নে এক বছর পর্যবেক্ষণ করবে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য বলেছেন, তিনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক, প্রশাসনিক এবং অবকাঠামোগত সব ধরনের উন্নয়ন শিক্ষার্থীদের সমন্বয়েই করতে চান। বৈঠকে এতোটুকুই আলোচনা হয়েছে।

অপরদিকে সংবাদ সম্মেলনে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব আহমেদ, আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়াহিদুর রহমান ও শহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অনড় থেকে আমরা শর্তসাপেক্ষে এক মাসের জন্য উপাচার্যকে সময় দিতে চাই।

আমরা তার সাথে আলোচনায় কিছু দাবি উত্থাপন করেছি। তিনি দাবিগুলো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

যদি এক মাসের মধ্যে দাবিগুলোর বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে উপাচার্য স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।

শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে রয়েছে, নতুন নিয়োগ দেওয়া কোষাধ্যক্ষকে সম্পূর্ণ অপসারণ ও যোগদানে বিরত থাকার ব্যবস্থা; আইনগত প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করে সহ-উপাচার্যকে তার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া; বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে দৃশ্যমান যৌক্তিক কাজ দেখানো;

পাশাপাশি জুলাই বিপ্লবের স্মৃতিফলক নির্মাণে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ; জুলাই বিপ্লবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ; একাডেমিক কাউন্সিল থেকে অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহকে অপসারণ;

বিগত দিনের নিয়োগের সার্কুলার বাতিল করে নতুন নিয়োগের সার্কুলার এবং নিয়োগ বোর্ড থেকে জুলাই বিপ্লবের চেতনা বিরোধীদের অপসারণ; গ্রাউন্ডফ্লোরের সামনে থেকে মূল ফটক পর্যন্ত পিচ ঢালাই সড়ক নির্মাণ; সব ফটকে এলিইডি লাইট স্থাপন; ভিসি দপ্তরের বিতর্কিত কর্মচারীদের অপসারণ;

সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী মাইশার মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে দাবিকৃত আট দফা বাস্তবায়নের যথাযথ উদ্যোগ; ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মান ঠিক রেখে ভর্তুকি দিয়ে তদারকিসহ ২০ টাকা মূল্যের খাবারের প্যাকেজ চালু; নম্বর টেম্পারিংয়ের সাথে জড়িত সব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যথাপোযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বরাদ্দকৃত রুমের সমবণ্টন নিশ্চিত করা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ নভেম্বর রাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের একাংশের বাঁধার মুখে যোগদান করতে এসেও ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন নতুন কোষাধ্যক্ষ আবু হেনা মোস্তফা কামাল খান।

এরপর থেকে তিনি আর ক্যাম্পাসে আসেননি। পরেরদিন ২৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবি করেন। উপাচার্য পদত্যাগ না করায় ২৮ নভেম্বর তার কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের ওই অংশকে নিয়ে পাঁচ ঘণ্টা বৈঠক করেন উপাচার্য।

কিন্তু সমঝোতা ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়ে যায়। পরে শিক্ষার্থীদের আরেক অংশ উপাচার্যের কক্ষের তালা খুলতে যান। তখন দুই পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *