স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল
সেবা নিতে আসা লোকজনের কাছ থেকে অর্থ আদায়, নিয়মিত কর্মস্থলে উপস্থিত না হয়ে অফিস ফাঁকি দেয়াসহ বিস্তার অভিযোগে তিনজন কর্মচারীকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছিলো। এতেও তারা সংশোধন না হওয়ায় অবশেষে ওই তিন কর্মচারীকে শোকজ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
পাশাপাশি স্থানীয় এক যুবদল নেতার অবৈধ ড্রেজারে অভিযান পরিচালনা করে অর্ধলাখ টাকা জরিমানা করেছিলেন জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট ফারিহা তানজিন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শোকজ পাওয়া ওই তিন কর্মচারী এবং অর্থ দন্ডপ্রাপ্ত যুবদল নেতার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এনিয়ে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ পুরো আগৈলঝাড়া উপজেলাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে ইউএনওকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন উপজেলার সর্বস্তরের সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা।
আজ বুধবার দুপুরে সরেজমিনে আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়সহ অফিসের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের অফিস সহকারী মতিউর রহমান রহস্যজনক কারণে একটানা ৬৮ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন।
একইভাবে অফিস সহায়ক আমির আলী ও বিলকিস আক্তারের বিরুদ্ধে অফিস ফাঁকির পাশাপাশি সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে উৎকোচ আদায়ের বিস্তার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি সেবাগ্রহীতারা ইউএনওকে অবহিত করেন। তাদের তিনজনকেই প্রাথমিকভাবে মৌখিকভাবে সর্তক করা হয়। এতেও তারা সংশোধন না হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারিহা তানজিন অতিসম্প্রতি তাদের তিনজনেই শোকজ করেন। এরপরই ওই তিন কর্মচারী ইউএনও’র ওপর ক্ষিপ্ত হন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অফিসের কয়েকজন কর্মচারীরা বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অফিস সহকারী মতিউর রহমানের ক্ষমতার দাপটে অফিসের কর্মচারীরা সর্বদা তটস্থ ছিলেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অফিস থেকে পালিয়ে যায় ফ্যাসিষ্টের দোসর মতিউর।
তারা আরও বলেন, স্থানীয় এক যুবদল নেতার ছত্রছায়ায় সেই মতিউর রাতারাতি ভোল্ট পাল্টিয়ে এখন নিজেকে বিএনপির নির্যাতিত কর্মী দাবি করে আবার অফিসে দাপট দেখাতে শুরু করেছে। তার অবৈধ সুযোগ সুবিধা না দেয়ার কারণেই তিনি ইউএনও’র বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার শুরু করেছে।
তারা আরও জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনপূর্বে যুবদল নেতা হেমায়েত তালুকদারের অবৈধ ড্রেজারে অভিযান পরিচালনা করে অর্ধলাখ টাকা জরিমানা করেন ইউএনও। এতে সে (হেমায়েত) ইউএনওর ওপর ক্ষিপ্ত হন। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ইউএনও’র বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার শুরু করেছেন ওই তিন অফিস কর্মচারী এবং যুবদল নেতা।
কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে জানতে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মতিউর রহমান নিজেকে বিএনপি সমর্থক দাবি করলেও অন্যকোন বিষয়ে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
তবে যুবদল নেতা হেমায়েত তালুকদার অফিস কর্মচারীদের উল্লেখিত অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন।
সার্বিক বিষয়ে আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারিহা তানজিন বলেন, অফিসে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের পাশাপাশি অফিস কর্মচারীদের অনিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় এবং স্থানীয় এক অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ী কর্তৃক ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলনের ঘটনায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা করার কারণেই তারা সম্মিলিতভাবে তাদের লোকজন দিয়ে আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, অফিসে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না গেলে সেই অফিস কখনও দুর্নীতি মুক্ত করা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন একজন কর্মচারী তার অফিস প্রধানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মাধ্যমে এধরনের বক্তব্য দিতে পারেনা। বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।