জুলাই-আগস্টে গণহত্যার অভিযোগে করা মামলায় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলের মন্ত্রী আনিসুল হক, দীপু মনিসহ কারাগারে থাকা ১৪ জনকে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল রবিবার প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। আসামিদের হাজিরের নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম।
অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা আসামিদের মধ্যে সাবেক ১০ মন্ত্রী হলেন- আনিসুল হক, আব্দুর রাজ্জাক, গোলাম দস্তগীর গাজী, শাজাহান খান, দীপু মনি, ফারুক খান, কামাল আহমেদ মজুমদার, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন ও জুনায়েদ আহমেদ পলক। এ ছাড়া রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও তৌফিক-ই এলাহি; আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম।
গত ১৭ অক্টোবর জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের পৃথক মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই ৪৬ জনের মধ্যে আরও রয়েছেন- শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, ওবায়দুল কাদের, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ ফজলে শামস পরশ, আ ক ম মোজাম্মেল হক, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, দীপু মনি, মোহাম্মদ এ আরাফাত, জুনায়েদ আহমেদ পলক, শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিক, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক জাফর ইকবাল, সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুন, র?্যাবের সাবেক ডিজি হারুন অর রশিদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদ, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, অতিরিক্ত উপ মহাপরিদর্শক প্রলয় কুমার জোয়ার্দার।
এদিকে জুলাই-আগস্ট গণহত্যার অভিযোগে সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিবসহ ১৭ সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশনের আবেদনের শুনানি নিয়ে গতকাল একই ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। শুনানিকালে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে পুলিশের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তোলা হয়।
আদেশের বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা ট্রাইব্যুনালে ৩টি আবেদন করেছি। যাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়েছিল এবং যারা ওয়ারেন্ট ইস্যুর আগে গ্রেপ্তার হয়েছিল তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য দুটি আবেদন করা হয়েছে। এতে মোট ২০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তিনি বলেন, যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টা, সাবেক ১০ মন্ত্রী, এক সেনা কর্মকর্তা ও সাবেক এক সচিবকে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী ১৮ নভেম্বর তাদের উপস্থিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, দ্বিতীয় পিটিশনে আমরা ৬ জনের বিরুদ্ধে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর জন্য আবেদন করেছিলাম। তারা হচ্ছেন- সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুন, বরখাস্তকৃত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, আব্দুল্লাহ আল কাফি, আরাফাত হোসেন, আবুল হাসান ও মাজহারুল ইসলাম। তারা বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেলে আছেন। তাদের বিরুদ্ধে যেহেতু আমরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়েছি, তাই তাদেরও এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়েছিল। তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আগামী ২০ নভেম্বর উপস্থিত করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মো. তাজুল ইসলাম বলেন, তৃতীয় আবেদনে ১৭ জনের বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছিলাম। আদালত সে আবেদনও মঞ্জুর করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। নিরাপত্তাজনিত কারণে সেই ১৭ জনের সবার নাম আমরা বলতে পারছি না। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান। আগামী ২০ নভেম্বর তাদের উপস্থিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, জুলাইয়ের ঘটনায় যে সকল পুলিশ অফিসার সরাসরি যুক্ত ছিলেন এবং যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, তাদের গ্রেপ্তার করা বা গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছি। যারা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, তাদের ভয়-ভীতির কারণ নেই। আমরা নির্দোষ ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাইব না। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাদের নাম ধারাবাহিকভাবে সামনে নিয়ে আসব। অপরাধ করেছে এমন কোনো ব্যক্তিকে ছাড় দেওয়া হবে না, বলেন তিনি।